গজারিয়া শিপইয়ার্ড থেকে উধাও ৭ কোটি টাকার অয়েল ট্যাংকার!
মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০২৪, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ণগজারিয়া শিপইয়ার্ড থেকে উধাও ৭ কোটি টাকার অয়েল ট্যাংকার! মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের মালিকানাধীন শিপইয়ার্ড থেকে মেরামতের জন্য আনা একটি পুরোনো অয়েল ট্যাংকার উধাও হয়ে গেছে। এই ঘটনায় অয়েল ট্যাংকারের মালিকপক্ষ ও শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ পরস্পরকে দায়ী করছেন। পরে এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছে উভয়পক্ষ। বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। জানা যায়, ২০১৮ সালের নভেম্বরে স্ক্র্যাপ হিসেবে ৭টি জাহাজ মেসার্স মাল্টিপল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। সেখান থেকে টি. টেকনাফ নামে পুরোনো একটি অয়েল ট্যাংকার মেরামতের জন্য প্রায় এক বছর আগে থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের শিপইয়ার্ডে নিয়ে আসেন মিলন হাজী, আলাউদ্দিন ও রফিক নামে তিন ব্যবসায়ী। জাহাজটির মেরামত এবং প্রায় এক বছরের বাথিং খরচ বাবদ মোট ৩০ লাখ টাকা বিল আসে। পাওনা টাকা দিতে বারবার তাগাদা দিলেও তারা তা দিতে তালবাহানা শুরু করে। এর মধ্যে গত ১৯ মে সকাল থেকে অয়েল ট্যাংকারটি শিপইয়ার্ডে দেখতে না পেয়ে বিষয়টি মালিকপক্ষকে জানায় শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে দুইপক্ষ। বিষয়টি সম্পর্কে থ্রি-অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জাহাজটি মেরামত করার পরে আমাদের শিপইয়ার্ডের এক পাশে মেঘনা নদীতে নোঙর করে রাখা ছিল। মেরামত এবং বার্থিং চার্জ বাবদ ৩০ লাখ টাকা বিল আসে। আমরা বিল পরিশোধ করার জন্য একাধিকবার নোটিশ দিয়েছিলাম কিন্তু তারা তা পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে গত ১৯ মে সকাল থেকে আমরা জাহাজটি শিপইয়ার্ড এলাকায় না দেখতে পেয়ে জাহাজটির মালিকপক্ষকে জানাই। আমাদের ধারণা পাওনা টাকা পরিশোধ না করার জন্য পরিকল্পিতভাবে তারাই জাহাজটি সরিয়ে ফেলেছে। ৮-৯ দিন চারদিকে খোঁজাখুঁজি করে আমরা জাহাজটির হদিস না পেয়ে ২৯ মে থানায় লিখিত অভিযোগ করি।’ বিষয়টি সম্পর্কে মেসার্স মাল্টিপল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রতিনিধি মহিউদ্দিন বলেন, ‘শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ দুবার আমাদের কাছে বিল পাঠায়। আমরা বিল পেয়ে তা পরিশোধ করি। গত ২৯ মে তারিখে আমাদের কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি জাহাজটি নিয়ে আসার জন্য শিপইয়ার্ডে গিয়ে দেখেন সেখানে জাহাজ নেই। আমাদের ধারণা জাহাজটি তারা অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে অথবা কেটে বিক্রি করে ফেলেছে। জাহাজটির বর্তমান বাজারমূল্য ৭ কোটি টাকার বেশি। এ বিষয়ে আমরা গত ৩০ মে গজারিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি।’ বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজিব খান বলেন, উভয়পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানে। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব। এদিকে খবর নিয়ে জানা যায়, জাহাজের নিবন্ধন দেওয়া প্রতিষ্ঠান নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের সর্বশেষ তালিকায় ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত জাহাজটির মালিকানা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের। স্ক্র্যাপ হিসেবে বেশ কয়েক বছর আগে বিক্রি করা একটি অয়েল ট্যাংকার মালিকানা এখনো কেন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে এটা জানতে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার এবং রেজিস্টার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা নৌযানের নিবন্ধন দিয়ে থাকি। আমাদের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী ‘ট্যাংকার টেকনাফের’ মালিকানা এখনো বিআইডব্লিউটিসির। প্রতিষ্ঠানটি যদি কোনো জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করতে চায় তাহলে আগে আমাদের কাছ থেকে তাদের প্রত্যয়ন নিতে হবে এবং জাহাজটি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে কি না, এ মর্মে লিখিতভাবে জানাতে হবে। এই নৌযানটির জন্য বিআইডব্লিউটিসি আমাদের কাছ থেকে কোনো প্রত্যয়ন নেয়নি এবং স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করার বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। তারা কেন এমনটি করল আমি খবর নিয়ে দেখছি।’ বিষয়টি সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম মতিউর রহমানের টেলিফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। অয়েল ট্যাংকারটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা শিপ বিল্ডিংয়ের তথ্য বলছে ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থের জাহাজটি নির্মাণ করা হয় ১৯৪৪ সালে। তবে নৌ বাণিজ্য দপ্তরে তালিকায় জাহাজটির নির্মাণ সাল ১৯৪৫ দেখানো হয়েছে।