• ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২
  •   | হট লাইনঃ ০১৮৮৩১০৭৯৫৪

বগুড়ার হারিয়ে যাওয়া পুণ্ড্রনগর: বাংলার প্রাচীন সভ্যতার স্বাক্ষর

বগুড়ার হারিয়ে যাওয়া পুণ্ড্রনগর: বাংলার প্রাচীন সভ্যতার স্বাক্ষর

রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায় হলো পুণ্ড্রনগর, যা বর্তমান বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় এলাকায় অবস্থিত ছিল। এই নগরীটি ছিল প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী এবং বাংলার অন্যতম প্রাচীন ও সুপরিকল্পিত নগরকেন্দ্র। পুণ্ড্রনগরের ইতিহাসের সূত্রপাত খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকেই। মহাস্থানগড়ে আবিষ্কৃত ব্রাহ্মি লিপির ফলক, প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি, পুকুর, সড়ক ও অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রমাণিত হয় এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ ও পরিকল্পিত নগরী। মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন বংশের শাসনামলে এই নগরী রাজনীতি, ধর্ম, শিক্ষা ও বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। খ্যাতনামা চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং (৬০২-৬৬৪ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর ভ্রমণবিবরণীতে পুণ্ড্রনগরের সৌন্দর্য, মনোরম মঠ, অলঙ্কৃত মন্দির, বিশাল পুকুর ও সুশোভিত উদ্যানের বিবরণ দিয়েছেন। করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় এই নগরী জলপথে বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত উপযোগী ছিল। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম (১৮১৪-১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দ) ১৮৭৯ সালে এই প্রাচীন নগরীকে পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী হিসেবে শনাক্ত করেন। সি.জে. ও'ডোনেল, ই.ভি. ওয়েস্টম্যাকট ও হেনরি বেভারিজের মতো পণ্ডিত ব্যক্তিরাও এই অঞ্চল পরিদর্শন করেন এবং তাদের প্রতিবেদনে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। দুর্ভাগ্যবশত, কালের প্রবাহে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, করতোয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং প্রশাসনিক অবহেলার কারণে এই সমৃদ্ধ নগরী ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে পড়ে। বর্তমানে মহাস্থানগড় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে স্বীকৃত, যেখানে নিয়মিত খননকার্য চালিয়ে প্রাচীন বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানাবিধ নিদর্শন উদ্ধার করা হচ্ছে।