• ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১
  •   | হট লাইনঃ ০১৮৮৩১০৭৯৫৪

মাদকমুক্ত তারুণ্যই গড়তে পারে সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ

মাদকমুক্ত তারুণ্যই গড়তে পারে সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৭ অপরাহ্ণ

দেশ জুড়ে মাদক সেবন ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা তুলনামূলক হারে বাড়ছে এবং দেশের সরকারপ্রধানেরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। রেনেসাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মোঃ আতাউর রহমান বলেন:- বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশ দেশে রয়েছে মাদকের সুবিশাল অন্ধকার বাজার। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি শহর, উপশহর এমনকি গ্রামেও হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মতো মাদকদ্রব্য। মাদকের কালো মেঘ ঢেকে ফেলছে তারুণ্যের সম্ভাবনাময় সোনালি সূর্য। মাদকাসক্ততা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশকে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। আমাদের দেশে বহুল ব্যবহূত মাদকের মধ্যে মারিজুয়ানা, অপিয়াম, প্যাথেডিন, কোডিন বা ফেনসিডিল ও এটিএস বা ইয়াবা ট্যাবলেট উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এটিএস বা ইয়াবা ট্যাবলেট এবং পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার ও ইন্ডিয়া থেকে আসছে নেশার দ্রব্য। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ৭০ কোটি টাকার মাদকজাত দ্রব্য কেনাবেচা হয়। আর ক্রেতা ও সেবনকারীদের অধিকাংশ তরুণ, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। তারা মানসিক হতাশা কাটাতে এবং শখের বশে ঝুঁকে পড়েছে মাদকের দিকে। শুধু তরুণ সমাজ নয়, অবিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়ে সদ্য কৈশোরে উত্তীর্ণ স্কুল-কলেজে পড়ুয়ারাও মাদক সেবন করছে এবং জীবন শুরুর আগেই স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিচ্ছে। আরো দুঃখের বিষয়, মাদক সেবনকারীদের ৪০ শতাংশ বেকার এবং প্রায় ১৫ শতাংশ স্টুডেন্ট। এই ৫৫ শতাংশ মাদক সেবনকারী প্রতিদিন নেশার টাকা জোগাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল বা চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে এবং দেশে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ছোটোখাটো ক্রাইমের পাশাপাশি খুন-খারাবিও বাড়ছে, অনেকে আবার মাদক গ্রহণ করতে করতে হয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী। এভাবে চলতে থাকলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হতে খুব বেশি দিন লাগবে না। যাদের চোখ নতুন কিছু জানার স্বপ্নে বিভোর থাকার কথা, যারা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, জাতির কর্ণধার হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হয়, সেই তরুণ সমাজ ডুবে যাচ্ছে মাদক নামক অন্ধকার জগতে। তরুণ সমাজের স্বপ্নের মৃত্যু মানে সামগ্রিক অর্থে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া। মাদক একটি দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইয়াবা নামক মারণবিষ আমাদের দেশে আসছে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে এবং বর্ডার ক্রস করে প্রতিদিন কয়েক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট দেশে আনতে সাহায্য করে কক্সবাজার ও টেকনাফের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা; অনেক সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামও উঠে আসে। টেকনাফের প্রায় ১৩০টি গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের প্রধান পেশা ইয়াবা ব্যবসা। সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে মাদক ব্যবসায়ে। গ্রাম থেকে শহর—সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে এবং হাত বাড়ালেই মিলছে এই মারণবিষ। আমাদের দেশ ও যুবসমাজ রক্ষায় এই বিশাল সংখ্যাকে শূন্যে নিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। দৃষ্টি রাখতে হবে, নতুন করে আর একটি তরুণও যেন মাদকাসক্ত না হয়। সঠিক পরিকল্পনা, মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা, দল-মতনির্বিশেষে মাদকের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। মাদকসেবীদের পরিবার থেকে বিছিন্ন নয়; বরং মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে, যা সুপথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। দেশ, দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত এবং মাদক-সংক্রান্ত মামলায় দীর্ঘসূত্রতা দূর করে দ্রুততার সঙ্গে রায় ঘোষণা করতে পারলেই মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাবে বাংলাদেশ।